শতাব্দী প্রাচীন এই বাষ্প লোকোমোটিভগুলো শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং ওল্স্টজিনের প্রতিদিনের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বাষ্প ইঞ্জিনগুলো ঠাঁই পেয়েছে জাদুঘরের প্রদর্শনীতে অথবা বিশেষ কোনো ঐতিহ্যবাহী ভ্রমণে, তখন ওল্স্টজিনের ডিপো থেকে প্রতিদিন ইঞ্জিনগুলো কয়লার ধোঁয়া উড়িয়ে লেশনো বা আশেপাশের গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে ছুটে চলে। এটি বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি স্থানের মধ্যে অন্যতম, যেখানে আপনি বাষ্প ইঞ্জিনের সগর্জন শোনা এবং তার বিশাল চাকার ঘূর্ণন নিজ চোখে দেখার বিরল সুযোগ পাবেন।
এই ব্যতিক্রমী ধারাবাহিকতার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। একসময় পোল্যান্ডে, বিশেষ করে কমিউনিস্ট শাসনামলে, কয়লার সহজলভ্যতা বাষ্প ইঞ্জিনের ব্যাপক ব্যবহারকে সম্ভব করেছিল। যখন পশ্চিমা দেশগুলো ডিজেল ও বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছিল, পোল্যান্ড তখনো তার বাষ্প শক্তিকে আঁকড়ে ধরেছিল। যদিও নব্বইয়ের দশকে এর ব্যবহার অনেকটাই কমে যায়, ওল্স্টজিনের ডিপোটি অদম্যভাবে টিকে থাকে, হয়ে ওঠে বিশ্বজুড়ে বাষ্প ইঞ্জিন প্রেমীদের তীর্থস্থান।
স্থানীয়দের কাছে এই ট্রেনগুলো শুধুই একটি পরিবহন মাধ্যম নয়, এটি তাদের পরিচয়ের অংশ, একটি জীবন্ত কিংবদন্তি। পর্যটকদের জন্যও এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বাষ্প ইঞ্জিনের সশব্দ আগমন, কয়লার মিষ্টি গন্ধ আর বয়লারের চাপা শিস যেন এক ভিন্ন সময়ের চিত্র তুলে ধরে। প্রতি বছর আয়োজিত "প্যারেড অফ স্টিম লোকোমোটিভস" অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাষ্প ইঞ্জিন একত্রিত হয়, যা হাজার হাজার দর্শককে মুগ্ধ করে।
প্রযুক্তির জয়যাত্রার এই যুগে ওল্স্টজিনের বাষ্প ট্রেনগুলো প্রমাণ করে যে, কিছু ঐতিহ্য এতটাই শক্তিশালী যে সময়ের স্রোতেও তারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারে। এটি কেবল একটি ট্রেনের গল্প নয়, এটি টিকে থাকার গল্প, ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার গল্প এবং এমন এক সময়ের গল্প যা এখনো সগর্বে বাষ্পের ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন